Thursday, January 3, 2019

খেলা | কিশোর গল্প

মেহেদী হাসান


পাড়ায় কয়েকজন দুষ্টু ছেলে ছিল। মানুষকে উৎফুল্লিত করার আবার বিরক্ত করার কী অভিনব কায়দাটাই না তারা জানে। একই জিনিস, সন্তুষ্ট করে আবার বিরক্তি ধরায়। এই রসিক ও দুষ্টু কিশোরদের ক্যাপ্টেন দিপু। সে ক্লাসের ক্যাপ্টেন নয় তবে এই আনন্দ কার্যের ক্যাপ্টেন সে। একটা ভ্রান্ত জিনিস দিয়ে মানুষকে খুশি হতে দেখে তারাও দূর থেকে হাসবে। যাকে উৎফুল্ল করল সে যে এক সময় রাগ করবে এই ভেবে তাদের হাসি ধরে না।

এতে যেন ম্যাজিক খেলার মতো একটা উপাদান আছে। এখানে দর্শকরাই খেলোয়ার। সাবান বের করে নেওয়ার পর পরিত্যাক্ত সাবানের মোড়কে মাটি দিয়ে তৈরি একটা সাবানের মতো টুকরো ঢুকিয়ে দেয় তাতে। আর মোড়কের মুখে স্বচ্ছ টেপ লাগিয়ে দিয়ে রাস্তার মধ্যে রেখে এসে একটু দূরে বসে থাকে তারা। অমনি কোনো পথিক তা পেয়ে আনন্দিত হবে। তা দেখে দিপুদের আনন্দ হবে আরও শতগুণে বেশি। হয়তো দু-একজন দক্ষ অভিনেতার মতো এগিয়ে গিয়ে বলবে, 'কি পেলেন ভাই?' উত্তর দেবে, 'পেলাম আর কি.......'
বেশিরভাগই পাওয়াটাকে অস্বীকার করার চেষ্টা করবে। এই দেখে তাদের আনন্দ আরও বেড়ে যায়। 'দেখিস গিয়ে কি আছে ওর মধ্যে' তারা মনে মনে বলে।

একদিন দিপু একটি কাগজে বেশ কিছু মিষ্টির মতো আকারের বুনো গাছের ফল একটি ছোট পলিথিনে ভরে কাগজের ঠোঙার ভেতরে ঢুকিয়ে পিনআপ করে দিল ঠোঙার মুখ। সময়টা ছিল হালখাতার মৌসুম। রাস্তায় রেখে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই এক মোটরবাইক চালক তা কুড়ে নিল। কুড়ে নেওয়ার সময় চারদিক একটু চেয়েও দেখল চারপাশে কেই আছে কি না। কুড়ে নিয়েই মোটর বাইকের গতি বাড়িয়ে উধাও হলো। এই দেখে তাদের হাসি থামে না। এই ভেবে আরও হাসি পেল যে, যদি বাড়িতে গিয়ে খোলে হয়তো কিছু হবে না কিন্তু যদি দু মাইল সামনের বাজারের মধ্যে কোন বন্ধুর দেখা পেয়ে বলে, 'এসো তো দোস্ত দেখি কী পেলাম?' তখন অবস্থাটা কী হবে?

একদিন তারা বেশ এমনটি করেছিল, টুথপেস্টের কার্টন থেকে টিউবটা বের করে নিয়ে তাতে ঢুকিয়েছে একটা চিকন কাচের শিশি। শিশিটা বেশ সুন্দরভাবে ফিট হয়ে গেল মোড়কটার মধ্যে। তারপর মোড়কের মুখে স্বচ্ছ টেপ লাগিয়ে তা রাস্তায় রেখে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন সাইকেল থামিয়ে কুড়ে নেয়। তার পেছনের দুজন সাইকেলবাহী বলল, 'ইস! আর একটু আগে এলেই.....'। এদিকে ওদের তো হাসির জোয়ার উঠে।

একদিন একলোক তাদের দেওয়া এরূপ একটি সাবানের প্যাকেট পেয়ে অধৌর্য হয়ে পাওয়া মাত্রই তা খুলে ফেলে। একটু দূরে বসে থাকা এই দুষ্টুরা বলে, 'বড্ড চালাক রে লোকটা!' যেন তাদের বড়শি থেকে মাছ পালালো। তারপর লোকটা সেটি ফেলে দিয়ে যাওয়া মাত্রই আবার এনে তাতে টেপ লাগিয়ে সেটা রেখে আসার পরপরই একজন দিনমজুর তা পেয়ে মহাখুশি। সে তার কোমরের খোশে তা গুজে রাখে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি খুশি দিপু ও তার পার্টনাররা।
কী একটা কাজ তাদের। মূলত গ্রামের এ পাড়ার ছেলেদের কাছে এটা খেলায় পরিণত হয়েছে। মানুষ ভুলানো খেলা, কত আনন্দের খেলা!

একদিন দিপু বাজারে গিয়ে দুজন লোকের একটি কথোপকথন শুনে বড় আনন্দ পায়। একজন বলল, 'কি রে কই যাচ্ছিস রে?'
- যাচ্ছি মাঠেরগঞ্জ
- রাস্তায় যদি সাতপাড়ার কাছে কিছু পড়ে থাকে কুড়ে নিবি না।
- কেন?
- কেন! জানতে চাইলে কুড়ে নিস।
দিপু মুখ টিপে হাসে। মানুষের মনে সাময়িক আনন্দ, বিরক্তি ও অভিজ্ঞতা জাগানোর কেমন কৌশল তাদের।

একদিন এক মৌলভী একটি সাবান ভেবে পাঞ্জাবীর পকেটে পুরলো। একজন বলল, 'আরে এটা তো মাদ্রাসার শিক্ষক রে, একি করলি!'
আরেকজন বলল, 'ভালই হয়েছে, ভেতরে একটি ছোট কাগজে লিখে দিয়েছি, 'লোভ করা ভালো নয়, ভাল হয়নি, কি রে?'
- হ হ চমৎকার হয়েছে, তোর যা বুদ্ধি!
আরেকজনের উত্তরে তাদের আনন্দ থেমে গেল, সে বলল, "ওর আবার কি বুদ্ধি? তার বদলে ও যদি লেখতো, 'আসসালামু আলাইকুম' ভাল হতো না?"
সবার উত্তর এক, 'হ, ভাল হতো, নব্বই নেকি পাওয়া যেত।'

যখন বাড়ির কাছাকাছি দিপুর এই খেলা আর টিকলো না তখন নতুন স্থান সে ঠিক করলো। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যখন রাস্তা ফাঁকা থাকতো তখন রেখে চলে আসতো। একদিন হঠাৎ দিপুর মামা তাদের বাড়িতে আসার সময় দিপুর দেওয়া একটি 'নতুন প্যাকেটে কালি শেষ হওয়া কলম' কুড়ে এনে ভাব দেখিয়ে দিপুর মাকে দিল। দিপুর মা দিল দিপুকে। দিপু মহা আনন্দে তা হাতে নিয়ে খুলতে যাবে অমনি ধরা পড়লো এটি তারই দেওয়া বস্তু!



তোমার লেখা গল্প পাঠিয়ে দাও 'লাইফ একাডেমি' এর লিটারেচার ডেস্কে। লেখা মানসম্মত হলে আমরা প্রকাশ করবো।

লেখা পঠাতে পারো ই-মেইলে কিংবা ফেসবুক পেজে।
ই-মেইল: lifeacademy.ac.bd@gmail.com
ফেসবুক: facebook.com/lifeacademy.ac.bd

Thanks | ধন্যবাদ

Wednesday, January 2, 2019

Preface to Literature Desk!

সাহিত্য কর্নার!


সুখপাঠ্য ও শিক্ষণীয় গল্পের ডালা নিয়ে এলো "লিটারেচার ডেস্ক"! গল্প পড়ো ও লিখো 'লাইফ একাডেমি' এর লিটারেচার ডেস্কে। লেখা মানসম্মত হলে আমরা প্রকাশ করবো।

লেখা পঠাতে পারো ই-মেইলে কিংবা ফেসবুক পেজে।
ই-মেইল: lifeacademy.ac.bd@gmail.com
ফেসবুক: facebook.com/lifeacademy.ac.bd

লিখো মন খুলে.../
মেহেদী হাসান
প্রতিষ্ঠাতা, লাইফ একাডেমি।